অভিজিৎ হাজরা , আমতা , হাওড়া :-
কবিইন্দ্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ” বীরপুরুষ ” কবিতার শেষ পংক্তিতে লিখেছেন ’ রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা- এমন কেন সত্যি হয় না আহা। ঠিক যেন এক গল্প হত তবে , শুনতে যারা অবাক হত সবে, দাদা বলত, ‘ কেমন করে হবে , খোকার গায়ে এত কি জোর আছে ‘ । পাড়ার লোকে বলত সবাই শুনে, ’ ভাগ্যে খোকা ছিল মায়ের কাছে ” । দেশে সময় সময়ে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যে ঘটনাগুলি বুদ্ধি দিয়ে ও ব্যাখ্যা করা যায় না। সেই ঘটনা অনেকে বিশ্বাস করে।অবার অনেকে বিশ্বাস করে না। সেই ঘটনা অনেকে আবার কাকতলীয়, প্রচার মাধ্যমের শিরোনামে আসার জন্য প্রচার করে থাকে বলে বলতে থাকেন। কবিইন্দ্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ বীরপুরুষ ‘ কবিতার ব্যতিক্রমী চিত্র দেখা গেল আমতায়। গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভার আমতা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সিরাজবাটি গ্ৰাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত একটি গ্ৰাম ’ মান্দারিয়া ‘ । এই গ্ৰামের কয়াল পাড়ার একটি সাড়ে তিন বছরের শিশু মুগ্ধা কয়াল। এই শিশু নিজের অসাধারণ ও অবিশ্বাস্য প্রতিভার জন্য ভারতের যে রেকর্ড বুক রয়েছে I B R ( INDIAN BOOK OF RECORDS)২০২৪ এই বইয়ে নাম নথিভুক্ত করে ফেলেছে। মুগ্ধা কয়াল এর বাবা গৌতম কয়াল ঔষধের সেলস্ ম্যান।মা মধুরিমা কয়াল গৃহবধূ।মুগ্ধার বয়স সাড়ে তিন বছর হয়ার কারণে এখনও কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি।মুগ্ধা গ্ৰামীণ ‘ অঙ্গনওয়াদি ‘ কেন্দ্রে (আই সি ডি এস -সুসংহত শিশু শিক্ষা কেন্দ্র) যায়। সাড়ে তিন বছরের মুগ্ধা ৪০ সেকেন্ডে ৬২ টি দেশের নাম সহ সেই দেশের রাজধানীর নাম,৩০ সেকেন্ডে ৩৭ টি দেশের জাতীয় প্রতীকের নাম,৭ মিনিট করে ৯০ টি বাংলা ও ইংরাজী ছড়া বা রাইমস্ মুখস্থ বলছে। সেই সাথে সাথে ২০ টি প্রাণীর নাম, বিভিন্ন দেশের জাতীয় পাখির নাম, বিভিন্ন দেশের জাতীয় পশুর নাম,পশু – পক্ষীর ডাকের নাম,২০ টি যানবাহনের নাম,২৫ টি করে বাংলা ও ইংরাজী শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ,১৫ দেশের পেশাদার ব্যক্তির নাম, বিভিন্ন দেশের মনিষীদের নাম বলে যাচ্ছে কোন দিধা – সংকোচ না করে। এই সব বলে চলেছে গড়গড় করে। সাড়ে তিন বছরের মুগ্ধা কয়াল এর এই অসাধারণ ও অবিশ্বাস্য স্বীকৃতি স্বরূপ I B R (INDIA BOOK OF RECORDS) এর পক্ষ থেকে I B R 2024 বই , মেডেল,মানপত্র,পেন,আই কার্ড ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী মুগ্ধা কে প্রেরণ করেছে। মুগ্ধা -র এই অসাধারণ ও অবিশ্বাস্য প্রতিভা প্রসঙ্গে মুগ্ধা -র বাবা গৌতম কয়াল ও মা মধুরিমা কয়াল বলেন , ” মুগ্ধা যখন হামাগুড়ি দিতে শেখে তখন আমরা খেলারচ্ছলে বাড়ির বিভিন্ন সামগ্রী দেখিয়ে ওকে সেই সামগ্ৰী গুলির নাম বলতাম ।পরে সেই সামগ্ৰী ঘরের মেঝেতে রেখে ওকে জিনিসটার নাম বলে আনতে বলতাম। দেখতাম ও হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে আমাদের বলা জিনিসটা ঠিক এনে দিচ্ছে।ওর এই মনে রাখার ক্ষমতা দেখে আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম। তারপর মুগ্ধা যখন আধো আধো কথা বলতে শেখে তখন আমরা বিভিন্ন ইংরাজী – বাংলা ছড়া বলতাম।পরে ও সেই গুলি বলতো। আস্তে আস্তে আমরা ওর সামনে বিভিন্ন দেশের নাম, তাদের রাজধানীর নাম, বিভিন্ন পশু – পক্ষীর নাম ও তাদের ডাকের নাম বলতাম, বিভিন্ন দেশের জাতীয় প্রতীকের নাম, যানবাহনের নাম, ইংরাজী – বাংলা – র বিভিন্ন বিপরীতার্থক শব্দ বলতাম, বিভিন্ন দেশের পেশাদার ব্যক্তির নাম, মনিষীদের নাম বলতাম। দেখলাম পরবর্তী সময়ে ওকে সেই গুলি জিজ্ঞাসা করলে ও গড়গড় করে সব বলে যাচ্ছে। মুগ্ধা -র বাবা ও মা -কে জিজ্ঞাসা করা হয় ,মুগ্ধা বড় হলে আপনারা মেয়েকে কি করতে চান? এই প্রশ্নের যে উত্তর পাওয়া গেল, এই উত্তর আজ পর্যন্ত কোন বাবা – মা দেন নি। প্রশ্নের উত্তরে অনেক বাবা – মা বলে থাকেন তাদের সন্তান – সন্ততিদের ভবিষ্যতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক -শিক্ষিকা, উকিল ইত্যাদি ইত্যাদি করতে চান।যে উত্তর কোন বাবা – মা – র কাছ থেকে পাওয়া যায় না, সেই উত্তর পাওয়া গেল মুগ্ধা-র বাবা গৌতম কয়াল ও মা মধুরিমা কয়াল এর কাছ থেকে । ওনারা বলেন, ” আমরা চাই আমাদের মেয়ে মুগ্ধা যেন মানুষের মতন প্রকৃত আদর্শবান মানুষ হয় “। মুগ্ধা – র এই অসাধারণ ও অবিশ্বাস্য স্বীকৃতি স্বরুপ I B R এর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ ডট ‘, এর পক্ষ থেকে মুগ্ধা – র হাতে মানপত্র ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদান করেছে । আমতা ২ নং পঞ্চায়েত সমিতির ” জয়পুর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দাও ” স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এর পক্ষ থেকে মুগ্ধা -র হাতে মানপত্র , বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ রোধে বৃক্ষ তুলে দেন। মুগ্ধা -র এই সাফল্যের ভারতীয় স্বীকৃতি পাওয়ায় মান্দারিয়া গ্ৰামবাসী সহ আমতাবাসী মুগ্ধা কে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।