নলহাটি: দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী প্রান্তিক পরিবারের মেয়ে মুসকান খাতুন। আর পাঁচটা মেয়ের মতো স্বচ্ছল পরিবারের মধ্যে থেকে বেড়ে ওঠার সৌভাগ্য বা সুবিধা কোনটায় মুসকানের ছিল না। বাবা সেখ ইসমাইল বাড়িতে ছোট্ট মুদিখানার দোকান চালান। মা জাহান্নারা বিবি গৃহবধূ। ভাই রেহান সেখ অস্টম শ্রেণিতে পড়ে। তাতেই কষ্টের সংসার। চাতরায় স্কুল করে নলহাটিতে চারটে টিউশন পড়তে আসতে হতো তাকে। মায়ের কাজেও হাত লাগাতে হয়েছে। বিপিএল তালিকা ভূক্ত হলেও পায় নি কোনো আবাস। আলাদা পড়ার ঘর ছিল না। ছোট্ট ঘরে ভাইবোনে একসাথে পড়া। উচ্চ মাধ্যমিকে তার সাফল্য কম কিসে! যদিও তার মার্কসিটে এই কষ্টের কথা লেখা থাকবে না। তাই তো মুরারইয়ের চাতরা গ্রামের সাধারণ পরিবারের মেয়ে মুসকান খাতুনের এই প্রাপ্য নাম্বারে খুশি তার গ্রামের মানুষ।
সে পেয়েছে ৯৪ শতাংশ নাম্বার। বিষয়ভিত্তিক নাম্বার ইংরেজী ৯৫, বাংলা ৯০, ভূগোল ৯১, ইতিহাস ৮৮, শিক্ষা ৮৮। চাতরা গণেশ লাল হাই স্কুলের ছাত্রী মুসকান খাতুন।
মুসকান জানায়, তার আরো নাস্বার প্রাপ্তির আশা ছিলো। ইতিহাস ও শিক্ষা এই দুই বিষয়ে আশানুরুপ নাম্বার পায় নি সে। যদিও সে তার স্কুলের মধ্যে সেরা। এরপর আইন নিয়ে পড়তে চায় মুসকান। কেন? উত্তর এলো– ছোট থেকে স্কুল শিক্ষক হওয়ার কথা ভাবতাম। এখন স্কুল শিক্ষার চাকরিতে এতো আইনী জটিলতা। তাই আইন নিয়ে পড়ে সফল আইনজীবি হয়ে সাধারণ গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায় মুসকান। তিনি বলেন, অনেক গরিব মানুষ সাধারন মানুষ পয়সার অভাবে বিচার পান না, আইনী সমস্যায় পড়ে থাকলেও পয়সার অভাবে সমস্যা জর্জরিত থাকেন। আমি আইন নিয়ে পড়ে গরিবের পাশে দাঁড়াতে চাই।
এদিন উচ্চ মাধ্যমিকে রেজাল্ট বের হবার পর মুসকানের ভালো নাম্বারে শুধু পরিবার নয়, খুশি এলাকার বাসিন্দারাও। তবে নাম্বার আরো একটু বাড়বে এমন প্রত্যাশা ছিলো তার পরিবারের। মুসকান জানায়, লড়াইটা আরও বাড়লো। অভাবের সংসারে বাবা এই খরচ যোগাবেন। ধারেকাছে বোলপুরে পড়তে হবে। তবে, মুখ্যমন্ত্রীর কন্যাশ্রীর টাকা পড়াশোনায় কাজে লেগেছে বলে জানায় মুসকান।